আস-সালামু আলাইকুম বন্ধুরা ,
আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কলকাতার ১০টি বাংলা সিনেমা। যেগুলো দেখার পর বাংলা সিনেমা সম্পর্কে আপনার ধারণা পাল্টে যাবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
১। মহানগর (১৯৬৩)
Directed by Satyajit Ray
মহানগর সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র। ১৯৬৩ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। মহানগর নরেন্দ্রনাথ মিত্রের একটি ছোটোগল্প 'অবতরণিকা' অবলম্বনে রচিত। শ্রেষ্ঠাংশে অনিল চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, জয়া ভাদুড়ি হরেন চট্টোপাধ্যায়, শেফালিকা দেবী প্রমুখ। এই ছবিটি ১৯৬৪ সালে সত্যজিৎ রায় চতুর্দশ বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে "সিলভার বিয়ার ফর বেস্ট ডিরেক্টর" পুরষ্কার পেয়েছিলেন।
সত্যজিৎ রায়ের অনিন্দ্য সৃষ্টি-'মহানগর'।
১৯৫০ এর দশকের মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধুর সংসার নির্বাহে স্বামীর আয় যথেষ্ট না দেখে একটি চাকরী গ্রহণ করেন। সে সময়ে নারী হিসেবে সাংসারিক কাজের বাইরে অন্য কাজ নিঃসন্দেহে যথেষ্ট মানসিক স্বাধীনতা সম্পন্ন ছিলো না৷ নিজের স্বাধীনতা, স্বামী সংসারের কথা চিন্তা করে একজন নারীর চাকরী করে সংসারের বাড়তি আয়ের গল্প নিয়েই এগিয়েছে গল্পের পটভূমি। এই সিনেমাটি বহুকাল পেরিয়ে শহুরে শিক্ষিত নারীদের প্রতিবাদী এবং সংগ্রামী হওয়ার গল্পকে উপস্থাপন করে।
শহুরে জীবনের ব্যস্ততা তাড়াহুড়ো, গসিপ - গুজব, স্ট্রাইক - ফাইট আর চায়ের কাপ নিয়ে বিরস মুখে অসহত্বের গল্প আমাদের সবারই জানা। তার ওপর যদি সারাদিন খেটে খুটে এসে সাংসারিক জীবনের আর্থিক বিড়ম্বনার কথা শুনে বিরস মুখে বিড়ি টানতে হয় তাহলে সে জীবনের কোন মানে হয় কি না সেটি মহানগরে দারুণ ভাবে উপস্থাপন করেছেন সত্যজিৎ রায়।
দেয়ালে চোয়ালে যখন অসহাত্বের ছাপ, তখন নারীদেরও প্রতিবাদী হয়ে উঠতে হয়৷ চাকরী হারানোর তোয়াক্কা না করে নিজের সহকর্মীকে চাকরী থেকে বিনাদোষে অব্যাহতি দেওয়ায় প্রতিবাদী হয়ে আরতি মজুমদার নামের এক চাকুরীজীবি নারী। এই গল্পের মূল চরিত্র তিনি।
'মহানগর ' সত্যজিৎ রায়ের অনবদ্য অনিন্দ্য এক সৃষ্টি।
২। মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)
Director :- Ritwik Ghatak
[স্পয়লার থাকতে পারে]
আত্মত্যাগকারী, অবহেলিত এক নারীর বেঁচে থাকার যে আকুতি, তা দেখানো হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। চরিত্রটির নাম নীতা। পূর্ব কলকাতায় দেশভাগ পরবর্তী এক নিম্ন মধ্যবিত্ত শরণার্থী পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সে। নিজের পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে তার সে কি যুদ্ধ! প্রথমে বাগদত্তা, তারপরে চাকরি এবং অবশেষে যক্ষ্মার সংক্রমণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য হারিয়েছে সে।
চলচ্চিত্রটিতে মূলত সময়কে তুলে ধরা হয়। সেইসাথে তুলে ধরা হয় নিম্ন আয়ের মানুষের সংগ্রাম। বেঁচে থাকার লড়াই ও আকুতিকে স্পষ্ট করা হয়েছে এখানে।
শেষ দৃশ্যে কান্না ভরা কণ্ঠে দাদাকে বলা নীতার সেই চরম উক্তি, "দাদা আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম"!
আপনার জীবনবোধকে জাগিয়ে তুলতে এই চলচ্চিত্রটি একবার হলেও দেখা উচিত। জীবনে দ্বিতীয়বার কোনো চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে খুব কেঁদেছি।
শক্তিপদ রাজগুরুর একই নামের উপন্যাস থেকে ঋত্বিক ঘটক এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। সাদাকালো যুগের এই অসাধারণ নির্মাণ না দেখে থাকা উচিত হবে না।
৩। ভূতের ভবিষ্যত (২০১২)
পরিচালক: অনিক দত্ত।
সিনেমার কাহিনী:
নবীন পরিচালক(পরমব্রত) শুটিং এর জন্যে লোকেশন দেখতে আসেন একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। হঠাৎ তার আলাপ হয় বাড়িরই একজন ব্যক্তির(সব্যসাচী) সংগে যিনি নাকি ওখানেই থাকেন। তার কাছে থেকে সেই বাড়িতে থাকা কতিপয় ভুতেদের কাহিনী শোনেন পরিচালক। যে গল্পের উপজীব্য বিষয় হল প্রমোটারি আর দখলদারীর ভিড়ে পুরোনো ভুতেরা কিভাবে স্বার্থান্বেষী মানুষদের সাথে লড়াই করে বাড়ির অধিকার অর্জন করলো। তারা প্রথমে আস্তানার খোঁজে আসে পরিত্যক্ত চৌধুরী বাড়িতে। সকলেই অপঘাতে মারা গেছিল।
র্যামসে সাহেব এবং রায় বাহাদুর(পরান বন্দোপাধ্যায়) এই দুজনে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত ভূতদের এই বাড়িতে থাকতে দেন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা জাতি, ধর্ম, পেশা, লিঙ্গ নির্বিশেষে ভুতেদের। একসময় প্রমোটারী চক্র বাড়ি দখল করতে এলে তারা বাধা দেয়। একাজে বিভিন্ন পেশার ভুতেরা একযোগে মতলব কষে হটিয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীদের। সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা ঘটে তখন, যখন গল্পের শেষে জানা যায় যিনি গল্প বলছিলেন তিনিও একজন ভুত এবং বাকিদের সাথী। শেষ পর্যন্ত পরিচালক তন্দ্রা ভেঙে দেখেন পুরোটাই স্বপ্ন, কিন্তু তিনি অবাক হন যখন দেখেন তার পকেটে পুরোনো ব্রিটিশ কয়েন, যেটা স্বপ্নের ভিতর বিপ্লব(সব্যসাচী) নামক ব্যক্তি দিয়েছিলেন। পরে যা দিয়ে তার সিনেমাটা বাস্তবে রূপ দিতে পারে।
একটা ইনফরমেশন দিচ্ছি, সাধারনত আমরা দেখে থাকি যে, তামিল, তেলেগু বা হিন্দী মুভি থেকে ভারতীয় বাংলা মুভি তৈরী করে। কিন্তু এটা তার ব্যতিক্রম হয়েছে। “ভূতের ভবিষ্যত” বাংলা মুভিটা ২০১২ সালে রিলিজ হয়েছিলো। এই মুভির হিন্দী ভার্সন তৈরী করেছে ২০১৪ সালে। তবে সেখানে একই ভূমিকায় অভিনয় করেছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
৪। The Apu Trilogy (1955-1959)
1. Pather Panchali (1955)
এই ৩ টা মুভি দেখার পরে আমি ফেসবুকে একটা স্টোরি দিয়েছিলাম আর লিখেছিলাম যে "সত্যজিৎ রায় অস্কার পাননি,অস্কার সত্যজিৎ রায় কে পেয়েছে"
মুভি এর বেপার এ বলার কিছু ই নাই ,চাইলে দেখতে পারেন, দেখে বুঝতে পারবেন ১৯৫০ সালের দিকে এই ভারত বাংলাদেশ কেমন ছিল।
আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এই মানুষ টার কথা কি বলবো, ওনার অভিনয় এর দক্ষতা মাপার কিছু নেই।
৫। চোখের বালি (২০০৩)
পরিচালক: ঋতুপর্ণ ঘোষ
আগেই বলেছি ছবিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস চোখের বালি এর উপর ভিত্তি করে বানানো। তো কাহিনীর শুরুতে দেখা যায় বিনোদিনী ২০ শতকের এক আধুনিক নারীর প্রতীক। সে শিক্ষিত, মার্জিত এবং অসম্ভব সুন্দরী। তার প্রথমে বিয়ে ঠিক হয় তারই পিশির ছেলে মহেন্দ্র এর সাথে। কিন্তু মহেন্দ্র হলো ধনী এবং নিজের মতে চলা এক শিক্ষিত ব্যাক্তি। তার যা মনে আসে তাই করে। পারিপার্শ্বিক কারো বিচারের ধার সে ধারে না। তাই সে বিনোদিনীকে না দেখেই বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। যার ফলে বিনোদিনীর অন্য জায়গায় বিয়ে হয়। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়। বিয়ের মাত্র ৬ মাসের মধ্যে বিনোদিনীর স্বামী মারা যায় এবং সে হয়ে পরে বিধবা। এরপর সে তার সেই পিশির সাথে তার বাড়িতে এসে পরে যেখানে কিনা মহেন্দ্রও থাকত। অপরদিকে একদিন মহেন্দ্র তার বন্ধু বিহারীর জন্য পাত্রী দেখতে যায় এবং সেখানে তার সেই পাত্রী পছন্দ হয়ে যায় এবং সে তাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। কিন্তু আশালতা সুন্দরী হলেও সে ছিল নিরক্ষর। মহেন্দ্র ও আশালতার সুখ দেখে বিনোদিনীর হিংসে হয় এবং সে মনে মনে ভাবতে থাকে যে যদি আজ মহেন্দ্র তাকে বিয়ে করতো তাহলে হয়তো তাকে বিধবার লাঞ্ছনা সহ্য করতে হতো না। এরপর মহেন্দ্র এর নজর যায় বিনোদিনীর দিকে এবং সে ভাবতে থাকে যে তার মতো একজন শিক্ষিত আধুনিক যুবকের বিনোদিনীর মতো শিক্ষিত নারী প্রাপ্য। এই ভাবনা থেকেই সৃষ্টি হয় আকর্ষণের এবং জন্ম নেয় এক সম্পর্কের । এ সম্পর্কের কথা জানতে পেরে আশালতা মহেন্দ্রের বাড়ি ছেড়ে কাষি চলে যায় অপরদিকে বিনোদিনী বিহারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এর পরবর্তী কাহিনী কি হয়? আসলে মহেন্দ্র এবং বিনোদিনীর শেষ পরিনতি কি এবং আশালতারই বা কি হয়? বিহারী কি বিনোদিনীর প্রস্তাবে সাড়া দেয়? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে দেখতে হবে ছবিটি।
যারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস পছন্দ করেন এবং এমন মনস্তাত্ত্বিক ছবি দেখতে চান তাদের জন্য চোখের বালি মাস্ট ওয়াচ। মুভিতে কিছু ১৮+ দৃশ্য রয়েছে। তবুও বলব ছবিটি দেখে আপনার ভালোই লাগবে।
৬। অন্তরমহল (২০০৫)
পরিচালক : ঋতুপর্ণ ঘোষ
কিছু কিছু সিনেমা আছে, যেগুলো বাইরে থেকে, শুধুমাত্র একজন দর্শকের perspective থেকে দেখতেই ভালো লাগে। আবার কিছু কিছু সিনেমা আছে, যেগুলোর একদম ভেতরে সেঁধিয়ে যেতে হয়, বলা যায়, সিনেমাটিরই একটি চরিত্র হয়ে যেতে হয়, একটি Observer চরিত্র। ঋতুপর্ণ ঘোষের এই অন্তরমহল সিনেমাটি এই দ্বিতীয় প্রকারটির মধ্যে পড়ে। আপনি যদি মনে করেন বাইরে থেকে শুধুমাত্র একজন দর্শক হিসেবে সিনেমাটি দেখবেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় খেয়াল করবেন, পরিচালনা কেমন হয়েছে বোঝার চেষ্টা করবেন, তাহলে খুব সম্ভবত নিরাশ হতে হবে, শুষ্ক বা নিরসও লাগতে পারে।
সিনেমাটি কেন দেখা উচিত তার দুয়েকটা কারণ বলা দরকার। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঋতুপর্ণ ঘোষ আমাদের সময়ের একজন খুব উঁচুদরের পরিচালক ছিলেন। পরিচিত-অপরিচিত লিটারারি টার্মগুলোর এত সার্থক ব্যবহার খুব কম বাঙালি পরিচালককেই করতে দেখি। তার সাথে পাত্রপাত্রীদের অভিনয়ের কথাটিও না বললে চলে না। অভিষেক বচ্চনকে নিয়ে নানান গ্রুপে নানারকম সমালোচনা দেখি, এই সিনেমাটি দেখার পর তার যোগ্যতার বিষয়টি হয়ত আপনাকে আরেকবার ভাবাবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে অভিষেকের অভিনয় খুবই ন্যাচারাল লেগেছে, তার চোখের ভাষা ছিলো দেখার মত। এই সিনেমায় সোহা আলী খানকে দেখে আমার "দেবী" সিনেমায় দেখা শর্মিলা ঠাকুরের কথা মনে পড়ে গেছে; মনে হচ্ছিলো সেই শর্মিলা ঠাকুরকেই আবারও পর্দায় দেখছি। জ্যাকি শ্রফও খুব ভালো অভিনয় করেছেন, কিন্তু যার অভিনয়ের কথা না বললেই নয়, তিনি হচ্ছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। What a brilliant performance! বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর চরিত্রটি ছোট ছিলো, কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, আর সেই চরিত্রে তিনি অনবদ্য ছিলেন। ক্যামেরাওয়ার্ক বেশ ভালো ছিলো, কালার গ্রেডিংটা ইংরেজ আমলের ভাবটা আনার জন্য যথেষ্ট! সেই সাথে ছিলো মানানসই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। ইউটিউবে সার্চ করলেই সিনেমাটি পেয়ে যাবেন।
৭। অশনি সংকেত (১৯৭৩)
পরিচালক : সত্যজিৎ রায়।
অশনি সংকেত ছায়াছবিটির পটভূমি 1943 - 44 সালের দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের কথা তুলে ধরা হয়েছ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার সেনাবাহিনীর জন্য অতিরিক্ত খাদ্য সংরক্ষণ করলে বাংলার গ্রামীণ অঞ্চলে তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ফলে 50 লাক্ষ মানুষ মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। এবং এই মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ কিভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষদের কিভাবে প্রভাবিত করেছিল তাই এই ছায়াছবির মূল উপজিব্য। এই চলচ্চিত্র জাতীয় ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত। যথা : রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক ( সংগীত পরিচালনার জন্য ) নয়াদিল্লি , 1973.
শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক চলচ্চিত্র, নয়াদিল্লি 1973.
গোল্ডেন বিয়ার, বার্লিন 1973.
গোল্ডেন হিউগো, শিখাগো 1974.
এবং ববিতা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেন।
৮। সপ্তপদী (১৯৬১)
পরিচালক: অজয় কর।
তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘সপ্তপদী’ ছবিটির পরিচালক ছিলেন অজয় কর। প্রযোজক ছিলেন উত্তম কুমার। সংগীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবির নায়ক কৃষ্ণেন্দুর ভূমিকায় উত্তম কুমার এবং নায়িকা রিনা ব্রাউনের ভূমিকায় সুচিত্রা সেন ছিলেন অনবদ্য। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রিনা ব্রাউনকে বিয়ে করার জন্য নিজের ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান হন ডা. কৃষ্ণেন্দু। কিন্তু কৃষ্ণেন্দুর বাবার অনুরোধে রিনা তাকে প্রত্যাখ্যান করে এই যুক্তিতে যে, সাধারণ এক নারীর জন্য যে নিজের ধর্ম ত্যাগ করতে পারে সে অন্য কোনো নারীর জন্য যে রিনাকে ত্যাগ করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়।
প্রত্যাখ্যাত কৃষ্ণেন্দু ধর্মযাজক হয়ে মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করে। অনেক বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আবার দুজনের দেখা হয়। রিনা তখন নিজেই ধর্মের উপর বীতশ্রদ্ধ। আত্মজিজ্ঞাসা, মানসিক দ্বন্দ্ব, সমাজের ঘাত-প্রতিঘাত সবকিছু মিলিযে ছবিটি ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য উত্তম কুমার শেক্সপিয়রের ‘ওথেলো’ নাটকটি রীতিমতো শিক্ষক রেখে পড়েন। ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গানটিতে উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক আবেদন অনবদ্য। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার প্রাইজ পান সুচিত্রা সেন। ১৯৬১ সালে ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়।
৯। দেবী (১৯৬০)
পরিচালক: সত্যজিত রায়
সিনেমা কোন ধর্ম নাই, জাত নাই। সিনেমা একটি শিল্প, সমাজের দর্পণ। যেমন হলিউড মুভিতে দেখা যায় প্রযুক্তির আধিক্য, বলিউডে প্রতারণা, রেপ সিন, আর আমাদের সিনেমায় কাওরান বাজার বস্তি দখলের লড়াই।
দেবী সিনেমার গল্প সমাজে যুগ যুগ ধরে চলমান কুসংস্কার নিয়ে।
স্বপ্নে পওয়া কবিরাজি ওষুধ, অলৌকিক আদেশ বা মাজারের কথা আমরা এই আধুনিক যুগেও দেখে অভ্যস্ত। অপ্রকৃতস্থ মানুষকে অলৌকিক শক্তিধর মেনে তাকে ঘিরে এক ধরনের বলয় তৈরি করে। এক সময় সে নিজেও বিশ্বাস করতে শুরু করে যে সে সত্যি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। দেবী সিনেমায় এমনই এক মধ্যবিত্ত পরিবারের শশুড় স্বপ্নে দেখতে পান তার ছেলের বউ দেবী কালির অবতার। তারপর তাকে দেবীর আসনে বসিয়ে চালাতে থাকেন
বিভিন্ন কর্মকাণ্ড।
মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দেবী চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুর। তাদের অভিনয় বাড়িয়ে বলার কিছু নেই। সোনালী যুগের সিনেমা দেখে ফেলতে পারেন।
১০। গয়নার বাক্স (২০১৩)
পরিচালক: অপর্ণা সেন
কাহিনি সংক্ষেপ: 'গয়নার বাক্স' সিনেমাটি মূলত সেই মৌসুমী চ্যাটার্জী তথা রাসমণিকে নিয়েই, যিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে স্বামী হারিয়ে ভাইয়ের সংসারে বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। সাথে যকের ধনের মতন আগলে রাখেন বাপের বাড়ি থাকে পাওয়া ৫০০ ভরি গয়না সমেত কাঠের একটি বাক্সকে, আর ভাইয়ের বাড়ির সকলের নজর থাকে সেই গয়নাগুলোর প্রতি।
একসময়, রাসমণির ভাইয়ের পুত্রবধূ হয়ে সে বাড়িতে আসে কঙ্কনা সেন শর্মা তথা সোমলতা। এর কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন রাসমণি মারা যাবার পর ভূতরূপে দেখা দিয়ে সেই গয়নার বাক্স রক্ষার দায়িত্ব দেয় সোমলতাকে, আর ভূত রূপেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে থাকে তার সাথে। এদিকে, তার মৃত্যুর পর সারাবাড়িতে সেই গয়নার খোঁজ চলতে থাকে। এমতাবস্থায়, সোমলতা কি শেষ পর্যন্ত গয়নার বাক্সকে রক্ষা করতে পারে? জানতে হলে পুরো সিনেমাটি দেখতে হবে। উল্লেখ্য, নানাবিধ হাস্যরসের মধ্যেও মধ্যে সেকালের অকাল বিধবা নারীদের সাধআহ্লাদ বিসর্জনের করুণ রূপও ফুটে উঠেছে সিনেমাটিতে।
বলে রাখি, ফিনিশিংটা আমার মতন অনেকের কাছে খাপছাড়া লাগতে পারে, তবে এর আগ পর্যন্ত পুরোটা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করার মতন। বিশেষ করে, মৌসুমী চ্যাটার্জীর অভিনয়, ডায়ালগ, গালিগালাজ তো একদম লাজওয়াব। অন্যান্যদের অভিনয়ও অনেক ভালো লেগেছে। ইউটিউবে পাওয়া যাবে মুভিটি।